India vs Bharat Controversy: বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় উদ্বেগপূর্ণ ও চর্চিত বিষয় হল- ‘ইন্ডিয়া’ নাম মিটিয়ে পুরোপুরি ভারত করা হবে কিনা? বিভিন্ন মিডিয়া এবিষয়ে বিভিন্ন রকম মতামত প্রকাশ করছে। এমনকি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও চলছে একই চর্চা। সেইসাথে চলছে দেশের ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলগুলির মধ্যে তর্ক-বিতর্ক।
উল্লেখ্য, ভারতের সভাপতিত্বে আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দেশে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে G-20 সম্মেলন, যেখানে পৃথিবীর মোট ৪০ টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধিরা সম্মিলিত হবেন। সেখানকার অফিসিয়াল নোটিশে ভারতের রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে “The President of Bharat” এবং প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে “Prime Minister of Bharat” -যা এই বিতর্ককে উস্কে দিয়ে, ব্যাপারটাকে ক্রমশ আরও জোরালো করে দিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, পার্লামেন্টের বিশেষ সেশনে এই নিয়েই বিল পাশ করা হবে।
আজকের প্রতিবেদনে দেখে নেব, যদি সত্যিই ইন্ডিয়া নামের অপসারণ ঘটানো হয় তবে, কোন কোন ক্ষেত্রে কি কি সম্ভাবনা তৈরী হবে।
নাম বদল করতে হলে কি কি পরিবর্তন হবে
প্রথমত, সংবিধানে সংশোধন আনতে হবে, তার জন্য তিনভাগের ২ ভাগ সদস্যের সহমতের প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, সমস্ত সরকারি কাগজপত্রে পরিবর্তন, যেমন পাশপোর্ট, টাকা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নাম, সরকারি ওয়েবসাইট থেকে শুরু অসংখ্য ক্ষেত্রে নাম পরিবর্তন করতে হবে।
তৃতীয়ত, দেশের নাম পরিবর্তন হলে, নতুন নাম- ‘ভারত’ হিসেবে রাষ্ট্রপুঞ্জ, বিশ্ব ব্যাঙ্ক সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্তরের একাধিক প্রতিষ্ঠানেও নামের পরিবর্তন আনতে হবে।
চতুর্থত, এছাড়াও, আমাদের দেশের Domain name (.in), বিভিন্ন লোগোতেও আনতে হবে পরিবর্তন।
আরেকটি খবর : অর্ধেক বিল জমা করলেই বাকি বিল সম্পূর্ণ মুকুব! দুয়ারে সরকারের এই কর্মসূচিতে বিপুল সাড়া।
‘ইন্ডিয়া’ নাম অপসারণের স্বপক্ষে কিছু যুক্তি
প্রথমেই জেনে রাখা ভালো, ভারতের সংবিধানের শুরুতেই বলা হয়েছে, “India, that is Bharat” অর্থাৎ “ইন্ডিয়া, যা হয় ভারত”। সুতরাং, ভারতের নামকরণ নতুন করে করার কিছু নেই। আসল ব্যাপারটা হল, India শব্দের অপসারণ ঘটানো। এর স্বপক্ষে কিছু যুক্তি অনেকটা এরকম-
১) ‘ভারত’ নামটি হিন্দিভাষী কিংবা বাংলা, আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বহুল প্রচারিত। তাই এটি দেশের সমস্ত মানুষের ক্ষেত্রে মনে রাখতে এবং উচ্চারণে অনেক সুবিধা।
২) ‘ভারত‘ শব্দের সঙ্গে আমাদের দেশের অনেক পুরোনো এবং লম্বা ইতিহাস জড়িয়ে আছে। শত শত বছরের পুরোনো পুঁথি কিংবা বর্ষ পুরোনো বিভিন্ন রাজা ও রাজবংশের ইতিহাসে ‘ভারত’ নামের প্রচলন ছিল।
৩) দেশের বাইরের বিভিন্ন স্থানে ভারতের সংস্কৃতি এবং ইতিহাস সম্বন্ধে শিক্ষিত সমাজের অজানা কিছু নয়। সম্পূর্ণ পৃথিবী ব্রিটিশ আমলের আগে পর্যন্ত আমাদের দেশকে ‘ভারত’ নামেই অভিহিত করত।
‘ইন্ডিয়া’ নাম অপসারণের বিপক্ষে যুক্তি
১) ‘ইন্ডিয়া’ নাম অপসারণের ফলে ভারতের দীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস চর্চায় অনেকটা সমস্যা তৈরি হবে।
২) এছাড়াও বিভিন্ন নেতিবাচক দিক যেমন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ফলে দেশের অনেক টাকা, অনেক সময় অপচয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক ব্যাবসায় ও বিভিন্ন সংস্থায় বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।
৩) দীর্ঘ ৪০০ বছরের ইতিহাসে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, বর্তমান সময়ে দেশের অগ্রগতি বাইরের দেশের সাধারণ নাগরিকের কাছে ‘ইন্ডিয়ার অগ্রগতি’ হিসেবেই পরিচিত। তাই বাইরের দেশের নাগরিকদের মনে ‘ইন্ডিয়া’ একটি বিরাট ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে পরিণত হয়েছে, সেখানে নাম পরিবর্তনের ফলে সাময়িক ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
উপসংহার
এখন দেখার এটাই যে, দেশের বর্তমান শাসক দল ঠিক কি সিদ্ধান্ত নেয়, যদিও বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ও আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বিষয়টি নাকচ করে, যাবতীয় বিতর্কে একপ্রকার জল ঢেলে দিয়েছেন। কিন্তু তবুও বর্তমান মহল যেন অন্যরকম সংকেত দিচ্ছে। যাই হোক না কেন, এবিষয়ে শাসক ও বিরোধী উভয়ের মধ্যে যুক্তি-তর্কের পরই, উভয়ের সম্মতিক্রমে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিৎ। আর সেইসাথে খেয়াল রাখা উচিৎ, এই পরিবর্তন যেন দেশ তথা দেশের সাধারণ জনগণের জীবনে সামান্য থেকে সামান্যতম প্রভাব বিস্তার করে।
আরেকটি খবর : বাড়িতে বাড়িতে খুলে ফেলা হচ্ছে ডিজিটাল মিটার, বসানো হচ্ছে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার।