আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো এমন একটি সরকারি যোজনার ব্যাপারে, যেটি ভারত সরকার দেশের প্রতিটি মেয়ের ভবিষ্যত সুরক্ষা ও উচ্চশিক্ষার কথা মাথায় রেখে শুরু করেছে। এটি এমনই একটি জনপ্রিয় প্রকল্প যা দেশের সর্বস্তরে, সবচেয়ে বেশি প্রশংসা কুড়োতে সক্ষম হয়েছে। হ্যাঁ; আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি সুকন্যা সম্মৃদ্ধি যোজনার সম্পর্কে।
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা কি?
২০১৫ সালে কেন্দ্র সরকার কর্তৃক শুরু করা উদ্যোগ- “বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও” এর অন্তর্গত এই প্রকল্প মূলত, মেয়েদের পুঁথিগত শিক্ষা এবং বিবাহ সুরক্ষিত করতে শুরু করা হয়েছিল। আমাদের দেশে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের জন্ম অনুপাত ক্রমশ নিম্নগামী হওয়ার দরুন, সরকার এই প্রকল্পের সূচনা করে।
যোজনায় কারা আবেদন করতে পারবেন?
সেই সমস্ত বাবা-মা যাদের কন্যা সন্তান রয়েছে, তারা এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন। এই প্রকল্পে সর্বোচ্চ দুটি কন্যা সন্তানের জন্য আবেদন জানানো যায়, তবে যদি কারোর জমজ কন্যা সন্তান থেকে থাকে এবং মোট কন্যা সন্তানের সংখ্যা হয় তিনজন, তবে সেই সমস্ত বাবা-মা তিনজনের জন্যই আবেদন জানাতে পারবেন।
এই প্রকল্পে আবেদনের যোগ্যতা
যেকোনো ভারতীয় নাগরিক এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারেন। তবে আবেদন করা কন্যা সন্তানের বয়স শূন্য থেকে দশ বছরের মধ্যে হতে হবে।
কত টাকা জমা করতে হবে?
এই প্রকল্পে আবেদন করতে, আবেদনকারীকে একাউন্ট খোলার সময় ন্যূনতম ২৫০ টাকা জমা করতে হবে সেইসাথে প্রতি বছর ন্যূনতম ২৫০ টাকা অথবা সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা জমা করা যাবে। আপনি চাইলে এই টাকা সারাবছর কিস্তির মাধ্যমেও জমা করতে পারবেন।
এটিও পড়ুন : টাটা ইনস্টিটিউটে সোলার ইনস্টলার এর ফ্রি কোর্সের মাধ্যমে চাকরি, মাধ্যমিক পাশেই কোর্স করার সুযোগ।
এই প্রকল্পের ম্যাচুরিটি কতদিনে হবে?
এই প্রকল্পে আপনাকে একাউন্ট খোলার সময় থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত টাকা জমা করতে হবে এবং ২১ বছর পর আপনার জমানো টাকা ম্যাচিওর হয়ে যাবে। অর্থাৎ, ধরুন আপনি আপনার মেয়ের ২ বছর বয়সে এই প্রকল্পে আবেদন করলেন, এক্ষেত্রে আপনার মেয়ের বয়স ১৭ বছর হওয়া পর্যন্ত, আপনাকে টাকা জমা করে যেতে হবে এবং মেয়ের বয়স ২৩ বছর হলে আপনি প্রকল্পে জমানো টাকা সুদে-আসলে ফেরৎ পাবেন।
এই প্রকল্পে কত টাকা সুদ পাওয়া যায়?
এই প্রকল্পে সরকার বার্ষিক ৮% হারে চক্রবৃদ্ধি সুদ দেয়। যদিও সরকার চাইলে প্রতি ৩ মাস অন্তর সুদের হারের পরিবর্তন করতে পারে। গতবছর পর্যন্ত সুদের হার ছিল ৭.৬%, যা এবছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
কোনোরকম ট্যাক্স না দেওয়ার সুবিধা
এই প্রকল্পের আওতায় জমা করা টাকার ওপর কোনোরকম ট্যাক্স দিতে হয়না। এটি একটি সম্পূর্ণ করমুক্ত প্রকল্প।
প্রকল্পের টাকা তোলার নিয়মগুলি
যে সমস্ত পরিস্থিতিতে আপনি ম্যাচুরিটি হওয়ার আগেই টাকা তোলার আবেদন জানাতে পারেন সেগুলি হল-
১) যদি আপনার মেয়ের বয়স ১৮ হয় এবং আপনাকে তার উচ্চশিক্ষায় টাকা খরচ করতে হবে, সেক্ষেত্রে আপনাকে আগের বছর পর্যন্ত জমা সুদ-আসলের ৫০ শতাংশ টাকা তোলার অনুমতি দেওয়া হবে।
২) যদি আপনি আপনার মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছেন, তবে আপনাকে একাউন্ট বন্ধ করার অনুমতি দেওয়া হবে এবং আপনি সুদে-আসলে জমা হওয়া সম্পূর্ণ টাকা ফেরৎ পাবেন।
এছাড়া, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রেও একাউন্ট বন্ধের অনুমতি দেওয়া হয়।
১) যদি দুর্ভাগ্যবশত সুবিধাভুক্ত মেয়ের মৃত্যু ঘটে।
২) যদি সুবিধাভুক্ত মেয়ে কোনোরকম জীবন সংশয়ী রোগে ভুগতে থাকে।
৩) যদি সুবিধাভোগী মেয়ের নাগরিকত্ব পরিবর্তিত হয়।
এই প্রকল্পে কতটা টাকা জমানো যেতে পারে?
ধরুন, আপনি প্রতিবছর ১০,০০০ টাকা এই প্রকল্পে জমা করালেন। সেক্ষেত্রে ম্যাচুরিটির সময়ে আপনি মোট ৪,৪৮,৯৬৯ টাকা ফেরৎ পাবেন। নীচে বিস্তারিত আকারে বোঝানো হল।
ধরুন, আপনার মেয়ের বয়স ২ বছর, এবার আপনি এইবছর অর্থাৎ ২০২৩ সাল থেকে এই প্রকল্পে প্রতি বছর ১০,০০০ টাকা করে জমানো শুরু করলেন, তাহলে ২০৪৪ সালে আপনার গচ্ছিত টাকা ম্যাচিওর হবে। আর আপনার জমানো সুদ-আসলের পরিমান হবে ৪,৪৮,৯৬৯ টাকা, যেখানে আপনার জমানো টাকার পরিমান ১.৫ লক্ষ টাকা এবং সুদের পরিমান হবে ২,৯৮,৯৬৯ টাকা।
কোথায় এই প্রকল্পের আবেদন করা যাবে?
এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে, আবেদনকারীকে পোস্ট অফিস অথবা প্রকল্পের সুবিধা প্রদানকারী যেকোনো ব্যাংকে সুকন্যা সমৃদ্ধি একাউন্ট খুলতে হবে। পরবর্তীকালে চাইলে আপনি ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের শাখার পরিবর্তনও করতে পারেন।
আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করলাম “সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার” বিষয়ে সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য। আশা করি সুস্পষ্টভাবে বোঝাতে পেরেছি। আপনার কন্যা সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে অবশ্যই এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করুন। আর আমাদের এই প্রতিবেদনটি তথ্যপূর্ন হয়ে থাকলে অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।